শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১২

আমি বিব্রত বোধ করছি: নিজ দেশে আমি যেন এক পরবাসী

আমি একজন মুক্তমনা। নির্দিষ্ট কোন ধর্মে বিশ্বাস আমার নেই। আমি বাংলাদেশের একজন সংখ্যালঘু নাগরিক। আমি আজ বিব্রত। কারণ সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সংবিধানে এমন কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে আমি এক ধরনের হীনমন্যতায় ভুগছি। আমার যুক্তিবাদী অনুভূতিতে আঘাত লাগার ফলে আমি প্রতিনিয়ত হচ্ছি ক্ষরিত। গণতন্ত্রের সুবিধা প্রয়োগ করে আমার সম অধিকার-বোধ খর্ব করায় আমি আমার মতামত প্রকাশেও ভয় পাচ্ছি। 

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ সক্রিয় অংশগ্রহণ, সহযোগিতা, সমর্থন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র লাভ করেছে। সর্বস্তরের জনগণের আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ঘিরেই রচিত হয়েছে এই বাংলাদেশ। সুতরাং ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সর্ব বিষয়ে সমাধিকার যে এখানে নিশ্চিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের সংবিধানেও এর স্বীকৃতি রয়েছে। 

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে রয়েছে, "যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে "। এখানে মূলনীতির একটি হোল 'ধর্মনিরপেক্ষতা'।
তৃতীয় অনুচ্ছেদে রয়েছে, "আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণ-মুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে"। এখানে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের জন্য রয়েছে 'রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য' অর্থাৎ সমান অধিকারের নিশ্চয়তা। 

কিন্তু সংবিধানের উপরোক্ত দুই অনুচ্ছেদে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' এবং সমান অধিকারের কথা বলা হলেও একই প্রস্তাবনায় পক্ষপাতমূলক সংশোধন এনে সংবিধানের প্রতি সংখ্যালঘু নাগরিকদের আস্থাকে সংশয়াবিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রথমত সংবিধানের শিরোনাম 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান'-এর পরেই রয়েছে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বাণী "বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম / (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে)/ পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে।"

প্রথম ভাগের ২ক ধারায় রয়েছে, "রাষ্ট্রধর্ম - ২ক। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন"।

উপরোক্ত অনুচ্ছেদ দুটি স্পষ্টতই একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। কথায় আছে "বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে", আমার হয়েছে সেই দশা। সংখ্যাগুরুর দাদা-গিরির কাছে আমি আজ বিব্রত, অসহায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন