আমি আজ বন্দী সভ্যতা নামক বেড়াজালে! লক্ষ লক্ষ বছর ধরে গড়ে উঠা আমার আরণ্যক অধিকারগুলোকে সভ্যতার নামে ছিনিয়ে নিয়েছ তুমি। আমি আজ দিশেহারা, সর্বদা ভয় ও উদ্বেগে কাটাচ্ছি দাসত্বের জীবন। আমি ভুলে গেছি আরণ্যক জীবনের উন্নত শিরের গর্বিত পদক্ষেপ। সামান্য জীবন ধারণের জন্য আমাকে আজ নতজানু হয়ে সভ্যতার কাছে কর্ম ভিক্ষা করতে হচ্ছে। আমার নিজের, পরিবারের, বাল-বাচ্চার জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমি রুখে দাঁড়াতে পারছি না। এই অধিকার আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আমার মেয়ের/বোনের ছিনিয়ে নেয়া আব্রু আমাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছে। আমার হাতে পরিয়ে দেয়া হয়েছে 'নিজ হাতে আইন তুলে না নেয়ার' বেড়ি। তাই আজ কাপুরুষগুলো যত্র তত্র আমাকে চোখ রাঙিয়ে চলেছে। ধূর্ত কাপুরুষগুলো হয়ে দাঁড়িয়েছ আমার দণ্ড মুণ্ডের কর্তা।
সভ্যতার সমস্ত অস্ত্রগুলো আজ তাদের হাতে। আমার আরণ্যক অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে, আমাকে নিরস্ত্র করে তারা আজ আমার শাসক! অরণ্যের স্বাধীনচেতা মানব পশু থেকে আমাকে করা হয়েছে সভ্য মানুষ! সভ্যতার কারাগারে আমি সভ্য কয়েদী। আমার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য মুছে দিয়ে আমাকে দেয়া হয়েছে সভ্যতার নাম্বার। আমার পরিচয়ের জন্য দেয়া হয়েছে আই ডি নাম্বার, এই পৃথিবীতে জন্ম লাভের দোষে আমাকে দেয়া হয়েছে জন্ম সনদ, জীবন সঙ্গী খুঁজে নেয়ার জন্য বিবাহের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো রকমের অনুমতি পত্র। আমার নিজের আরণ্যক অধিকার থেকে আমি নিজে একটি সুন্দর জীবন রচনা করতে পারছি না। কতগুলো ধূর্ত কাপুরুষ ক্যান্ডিডেট থেকে আমারই শাসক নির্বাচনের জন্য আমাকে দেয়া হয়েছে ভোটার আইডি। নিজের হাতে নিজেকে খুন করার অস্ত্র। এমন কি আমি কি কথা বলব কি কথা বলব না সেটাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আমি কি জানব কি জানব না সেই অধিকারও নির্ধারিত।
অথচ আরণ্যক জীবনে আমাদের সবারই ছিল একই অলিখিত অধিকার। প্রথমটি হল নিজেকে, নিজের পরিবারকে, নিজের গোষ্ঠীকে রক্ষা করার অধিকার। যেহেতু আমরা নিরস্ত্র ছিলাম না সেহেতু নিজেদের রক্ষা করার সাহস ও সামর্থ্য আমাদের ছিল। কোন ধূর্ত কাপুরুষগোষ্ঠি আমাদের আক্রমণ করার সাহস করতো না। আমরা মরে যেতে রাজী ছিলাম, বশ্যতা স্বীকারে নয়। সভ্য সমাজে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। অস্ত্র দেয়া হয়েছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ধূর্ত


সভ্যতার সমস্ত অস্ত্রগুলো আজ তাদের হাতে। আমার আরণ্যক অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে, আমাকে নিরস্ত্র করে তারা আজ আমার শাসক! অরণ্যের স্বাধীনচেতা মানব পশু থেকে আমাকে করা হয়েছে সভ্য মানুষ! সভ্যতার কারাগারে আমি সভ্য কয়েদী। আমার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য মুছে দিয়ে আমাকে দেয়া হয়েছে সভ্যতার নাম্বার। আমার পরিচয়ের জন্য দেয়া হয়েছে আই ডি নাম্বার, এই পৃথিবীতে জন্ম লাভের দোষে আমাকে দেয়া হয়েছে জন্ম সনদ, জীবন সঙ্গী খুঁজে নেয়ার জন্য বিবাহের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো রকমের অনুমতি পত্র। আমার নিজের আরণ্যক অধিকার থেকে আমি নিজে একটি সুন্দর জীবন রচনা করতে পারছি না। কতগুলো ধূর্ত কাপুরুষ ক্যান্ডিডেট থেকে আমারই শাসক নির্বাচনের জন্য আমাকে দেয়া হয়েছে ভোটার আইডি। নিজের হাতে নিজেকে খুন করার অস্ত্র। এমন কি আমি কি কথা বলব কি কথা বলব না সেটাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আমি কি জানব কি জানব না সেই অধিকারও নির্ধারিত।
অথচ আরণ্যক জীবনে আমাদের সবারই ছিল একই অলিখিত অধিকার। প্রথমটি হল নিজেকে, নিজের পরিবারকে, নিজের গোষ্ঠীকে রক্ষা করার অধিকার। যেহেতু আমরা নিরস্ত্র ছিলাম না সেহেতু নিজেদের রক্ষা করার সাহস ও সামর্থ্য আমাদের ছিল। কোন ধূর্ত কাপুরুষগোষ্ঠি আমাদের আক্রমণ করার সাহস করতো না। আমরা মরে যেতে রাজী ছিলাম, বশ্যতা স্বীকারে নয়। সভ্য সমাজে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। অস্ত্র দেয়া হয়েছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ধূর্ত
কাপুরুষ শাসকগোষ্ঠীর নেট ওয়ার্কদের হাতে।আমরা তাদের হাতে বন্দী পশু। আমরা আজ মেরুদণ্ডহীন। মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি না। আমাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তারা বলছে, তারাই নাকি আমাদের রক্ষা করার দণ্ড মুণ্ডের কর্তা। কিন্তু অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ প্রতিহত করা হচ্ছে গুম অথবা ফায়ারের মাধ্যমে। আমাদের নিরস্ত্র করে করা হয়েছে বিচারের কাঠগড়া। যেখানে আমাকেই প্রমাণ করতে হচ্ছে যে আমি অত্যাচারিত। আর সেটা প্রমাণ করতে হলে চাই ভাল উকিল, ভাল টাকা, যা আমার হাতে নেই, রয়েছে ধূর্ত কাপুরুষদের হাতে।
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে অরণ্যচারী আমাদের দ্বিতীয় অধিকারটি ছিল খেয়ে পরে বেঁচে থাকার অধিকার। পৃথিবীব্যপি ছিল আমাদের চারণভূমি। অরণ্য আমাদের সংগ্রহশালা। শস্যভূমিগুলো ছিল আমাদের কৃষিক্ষেত্র। এই পৃথিবীর সকল চারণভূমিতে সকলের ছিল অধিকার। আমরা বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলো পরস্পরের চারণক্ষেত্রের অধিকার অস্বীকার করি নাই। শুধু মানুষ কেন, পৃথিবীর বুকে লালিত অরণ্য, পাহাড়, নদী, চারণভূমিগুলো সযত্নে রক্ষা করাই ছিল আমাদের ধর্ম। পৃথিবীর বুকে চড়ে বেড়ানো অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীগুলোকে ধ্বংস করা আমাদের জন্য ছিল অধর্ম।লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আমরা এভাবেই পাহাড়, প্রাণী, জল, অরণ্যে সহাবস্থান করেছি। সহাবস্থান করার প্রাকৃতিক মন্ত্রই ছিল আমাদের ধর্ম, আমাদের প্রাকৃতিক আইন। কিন্তু সভ্যতার মন্ত্র শুনিয়ে এক সময় ধূর্ত কাপুরুষগোষ্ঠি আমাদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নিলো। বলা হোল এই অরণ্য, পাহাড়, জল, এই পৃথিবীর মালিক নাকি তারা। তাদের এই অধিকার নাকি দিয়েছে আকাশচারী কোন দেবতা। আমাদের অরণ্যের সহাবস্থানের ধর্মকে বলা হোল বর্বরের ধর্ম। আমাদের দীক্ষিত করা হোল আকাশচারী দেবতার মন্ত্রে। তারা হয়ে উঠলো আমাদের মালিক, রাজা, জমিদার, শাসকগোষ্ঠী, আমাদের দণ্ড মুণ্ডের কর্তা। আমাদের অরণ্যের আইনকে বর্বরের আইন আখ্যা দিয়ে আমাদের শেখানো হোল ওদের মালিকানা রক্ষা করার আইন। খাজনা দিয়ে ওদের ভূমি ব্যবহার করার আইন। কেড়ে নেয়া হোল আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের অধিকার; নিজেদের রক্ষা করার অধিকার। আমাদের মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে আমাদের করা হোল নতজানু দাস। 
আরণ্যক জীবনে প্রকৃতিই ছিল আমাদের শিশুদের শিক্ষালয়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট না করে, অন্যের অধিকার খর্ব না করে প্রকৃতি থেকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সংগ্রহ করার এবং সেগুলোকে ধারাবাহিক উন্নয়নের হাতে কলমে শিক্ষাই ছিল আমাদের শিক্ষা। কয়েকটি পশু পাখী শিকারের জন্য তীর ধনুক বর্ষাই আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। এর জন্য আমাদের কখনো বন্দুক, রাইফেল, মর্টার, কামান, এটম বোমার প্রয়োজন হয়নি।
আমাদের ছিল আরণ্যক নৈতিকতা। অরণ্যচারী অনান্য পশুদের মতই আমরা অন্য কোন প্রজাতিকে সমূলে ধ্বংস করে ফেলিনি। কিন্তু সভ্য জমানার মানুষের নৃশংসতায় অরণ্যচারী অনেক প্রজাতির প্রাণী আজ বিলুপ্ত। এমন কি উপনিবেশের নামে অনেক অঞ্চল থেকে স্থানীয় স্বজাতি মানুষকেও নির্মূল করা হয়েছে। মিথ্যাচারীতা, অসততা, ধাপ্পাবাজি, গুরুজনদের প্রতি অসম্মান, নারীদের প্রতি অসন্মান, শিশু-নির্যাতন ইত্যাদি অনৈতিক কর্ম কাণ্ড আমাদের আরণ্যক সমাজে অনুপস্থিত ছিল। আমাদের সমাজে বাল্য বিবাহ বা যৌন হয়রানি ছিল অনুপস্থিত। আমাদের যুবক যুবতীরা দৈহিক, মানসিক এবং কর্ম ক্ষমতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই কেবলমাত্র নিজের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে পারত।
নৃত্য-গীতে ভরপুর আমাদের সহজ সরল আরণ্যক জীবনের প্রাকৃতিক নিয়ম নীতিগুলো মুছে দিয়ে ধূর্ত কাপুরুষগোষ্ঠি আজ আমাদের শাসক হয়ে বসেছে। আমাদের শক্তি কেড়ে নিয়ে আমাদের নতজানু আজ্ঞাবহে পরিণত করেছে। পূর্ব-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রকৃতির সবকিছুর সাথে সহাবস্থানের বিশ্বাসকে বিনষ্ট করে আমাদের দেয়া হয়েছে কৃত্রিম শাস্ত্র। নতজানু সভ্যতা। জন্ম লাভের পর আমি আজ আর প্রকৃতির সন্তান নই। প্রকৃতির সকলকে ভালবাসার অধিকারও আমার নেই। আমার কপালে সেটে দেয়া হয়েছে জাতীয়তা, ধর্ম ও বর্ণের তকমা। আমি এর থেকে মুক্তি চাই।
আমাদের ছিল আরণ্যক নৈতিকতা। অরণ্যচারী অনান্য পশুদের মতই আমরা অন্য কোন প্রজাতিকে সমূলে ধ্বংস করে ফেলিনি। কিন্তু সভ্য জমানার মানুষের নৃশংসতায় অরণ্যচারী অনেক প্রজাতির প্রাণী আজ বিলুপ্ত। এমন কি উপনিবেশের নামে অনেক অঞ্চল থেকে স্থানীয় স্বজাতি মানুষকেও নির্মূল করা হয়েছে। মিথ্যাচারীতা, অসততা, ধাপ্পাবাজি, গুরুজনদের প্রতি অসম্মান, নারীদের প্রতি অসন্মান, শিশু-নির্যাতন ইত্যাদি অনৈতিক কর্ম কাণ্ড আমাদের আরণ্যক সমাজে অনুপস্থিত ছিল। আমাদের সমাজে বাল্য বিবাহ বা যৌন হয়রানি ছিল অনুপস্থিত। আমাদের যুবক যুবতীরা দৈহিক, মানসিক এবং কর্ম ক্ষমতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই কেবলমাত্র নিজের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে পারত।
নৃত্য-গীতে ভরপুর আমাদের সহজ সরল আরণ্যক জীবনের প্রাকৃতিক নিয়ম নীতিগুলো মুছে দিয়ে ধূর্ত কাপুরুষগোষ্ঠি আজ আমাদের শাসক হয়ে বসেছে। আমাদের শক্তি কেড়ে নিয়ে আমাদের নতজানু আজ্ঞাবহে পরিণত করেছে। পূর্ব-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রকৃতির সবকিছুর সাথে সহাবস্থানের বিশ্বাসকে বিনষ্ট করে আমাদের দেয়া হয়েছে কৃত্রিম শাস্ত্র। নতজানু সভ্যতা। জন্ম লাভের পর আমি আজ আর প্রকৃতির সন্তান নই। প্রকৃতির সকলকে ভালবাসার অধিকারও আমার নেই। আমার কপালে সেটে দেয়া হয়েছে জাতীয়তা, ধর্ম ও বর্ণের তকমা। আমি এর থেকে মুক্তি চাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন