বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

পাকিস্তানে ছাত্র হত্যা না জিহাদ?

বোকো হারাম শত শত স্কুল ছাত্রীদের গুম করে ফেললো। গতকাল পাকিস্তানে শতাধিক ছাত্রকে বোমা মেরে / গুলি করে হত্যা করা হোল। তালেবানরা বললো এটা জিহাদ অর্থাৎ ধর্মযুদ্ধ ! ধর্মযুদ্ধ হোল ধর্ম প্রসারের জন্য বিধর্মীদের বিরুদ্ধে, বিধর্মী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বিভিন্ন নামের সকল ধর্মীয় গোষ্ঠীই বলছে তাদের এই জিহাদি যুক্তির উৎস একই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এই গ্রন্থই অনুসরণ করে বলছে ইসলাম শান্তির ধর্ম। বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য আমাদের জিহাদ করার প্রয়োজন হয়নি। আমরা করেছিলাম স্বাধীনতা যুদ্ধ। কিন্তু আফগানিস্তানে তালেবানরা বলছে এটা তাদের জিহাদ।

আমরা যারা সাধারণ জনগণের উপর জিহাদের নামে আক্রমণের বিরুদ্ধে, আমরা যারা নারী/শিশুদের শিক্ষা লাভের সুযোগের পক্ষে, তাদের বিক্রি করে দেয়ার বিরুদ্ধে এবং আরো অনেক পশ্চাতপদতা সমর্থন করি না তারা কি শুধু নিন্দা জানিয়েই এই বিষবাষ্প থেকে মুক্ত থাকতে পারবো? নিদেন পক্ষে বিভ্রান্তিকর ধর্মীয় যুক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনার অধিকারও আমরা পাবো না?

এই বিষবাষ্প আজ সমাজে সন্তপর্নে নিঃসরিত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনেককে গ্রাস করে চলছে এটা আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি। আমাদের উঠতি বয়সের তরুণেরা রাস্তা ঘাটে, খেলার মাঠে, ভর্তি কোচিং এ এই জিহাদিদের সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে। প্রতিবাদ করার সাহস কারো হচ্ছে না। এমন কি নারী জিহাদিরা গৃহে গৃহেও ঢুকে পড়ছে। তৈরি করছে বিভিন্ন ধরণের গ্রুপ। মূল সমস্যা হচ্ছে ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ধারণা। এমনকি পরিবারে, বন্ধু মহলে এগুলো নিয়ে মুক্ত আলোচনার কোন সুযোগ নেই। আলোচনা করতে গেলেই কেউ কেউ ভয়ংকর অনুভূতি প্রবণ হয়ে পরেন অথবা অনেকেই মুক্ত আলোচনাকে সযত্নে এড়িয়ে চলেন। ফলে তথাকথিত জিহাদিদের জন্য আমাদের সমাজ হোল এক উন্মুক্ত চারণ ক্ষেত্র।

গণতান্ত্রিকরা ধর্মীয় অজ্ঞতাকে প্রসয়/সমর্থন দিয়ে ভোটের বাক্স ভরতে চান।

প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা ধর্মের সমালোচনাকে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়া মনে করেন।

সমাজতন্ত্রীরা মনে করেন শ্রেনিযুদ্ধই সকল সামন্তীয় অবশেষের অবসান ঘটাবে।

বিলোপবাদী বামরা মনে করেন এটা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এক ধরণের মুক্তিযুদ্ধ।

তথাকথিত মুক্তমনারা ধর্মীয় মনিষীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করে সুস্থ যুক্তিতর্ককে অঙ্কুরেই জলাঞ্জলি দেন।

আর আমরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি এই সুযোগে আমাদের উঠতি বয়সের তরুণ ছেলে / মেয়েদের ঘিরে আছে একদল শিকারি।  

বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৪

আদর্শিক সততার নায়ক ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন

ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের জীবনাবসান হল। সুদীর্ঘ্য ৯৪ বছর তিনি বেঁচেছিলেন। বেঁচে ছিলেন এই সমাজের যত কুলষতা, বৈষম্য, নির্যাতনকারিদের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তিনি ভালবাসতেন মানুষকে। তাই মানুষের বিরুদ্ধে মুনাফালোভী শাসকশ্রেণীর যে কোন চক্রান্তের তিনি ছিলেন অগ্রগামী প্রতিবাদকারী। স্বভাবতই দর্শনগত ভাবে তিনি ছিলেন নাস্তিক। কিন্তু তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়ীক। শুধু ধর্মীয় বৈষম্যই নয়, তিনি ছিলেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি কখনই একপেশে তথাকথিত মুক্তমনাদের মত ধর্ম বিদ্বেষী ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন বিজ্ঞান মনষ্ক।  তিনি সামাজিক বিজ্ঞান, ঐতিহাসিক বস্তুবাদের চর্চা করেছেন, মানুষকে তিনি বিজ্ঞানের আলোয় শিক্ষিত করতে চেয়েছেন, যে চর্চায় অধিবিদ্যাবাদ আপনিতেই ঝরে পরে। তাই তিনি কখনই শোষিত জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। তিনি ভাষা আন্দোলন করেছেন, মাতৃভাষার মর্যাদা চেয়েছেন, তাই বাংলাদেশের অন্যান্য শতাধিক ভাষার মর্যাদাকেও তিনি উর্দ্ধে তুলে ধরেছেন। তিনি শোষিত মানুষদের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক মুক্তি চেয়েছেন কিন্তু শোষিত মানুষদের হিন্দু, মোসলমান, বাঙালি, বিহারি, চাকমা, মারমা, আর্য্য, দ্রাবিড়, নারী, পুরুষ ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত করেননি। তাই তার মুক্তিযুদ্ধ ছিল সার্বিক মানুষের মুক্তিযুদ্ধ, শুধুমাত্র বাঙালি জাতির আংশিক মুক্তিযুদ্ধ নয়। তাই শোষক শ্রেণীর বর্তমান রাষ্ট্র তাঁকে ধারণ করতে পারে না। তাঁর আদর্শিক সততার কাছে মাথা নত করলেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা তাঁকে দিতে পারে না। তাঁর মর্যাদা এর থেকে অনেক বড়। তিনি পেয়েছেন জনগণের মর্যাদা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নাস্তিক ছিলেন কিন্তু হিপোক্রেট ছিলেন না। তাই তিনি তাঁর মরদেহ বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যে দান করে গেছেন। জনগণ তাঁর এই দান সশ্রদ্ধ চিত্তে গ্রহণ করেছে। তাঁর অবদান যেমন সাধারণ মানুষের কাছে চির অম্লান হয়ে থাকবে, তেমনি তাঁর কাছে প্রগতিশীলদের, মুক্তমনাদের শিক্ষণীয় রয়ে গেছে অনেক কিছু। 

বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৪

মানুষ এবং এনিমেল ইনস্টিংক্ট

মানুষ নিজেকে যতই উন্নত জীব হিসেবে মনে করুক না কেন আচার আচরণের দিক থেকে সে এনিমেল ইনস্টিংক্ট দ্বারাই পরিচালিত হয়। মানুষ হাস্যকর ভাবেই নামমাত্র জন্তু! একটা কুকুরের মতই সে খাবারের সন্ধানে থাকে, রাত হলে ঘুমায়, বিশ্রী মল ত্যাগও করতে হয়, যৌন মিলনের মত জঘন্য কাজটিও করে এবং সেই সময়ের শীৎকার/অভিব্যক্তি কুকুরের চেয়েও নিন্মমানের! 

মানুষের সামাজিক আচরণও পশুদের চেয়ে ভিন্ন নয়! খাদ্যের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে তারাও কখনো একক পরিবার কখনো একান্নবর্তি পরিবার, গোষ্ঠী, ক্ল্যান গঠন করে। প্রতিটি পুরুষই নিজেকে আলফা পুরুষ ভাবে এবং সাধ্য অনুযায়ী একটা টেরিটরি তৈরী করে নেয়। তার অধীনস্ত সকল পুরুষকে সে শাসনে রাখে। আর আলফা হতে না পারলে আলফা পুরুষের তোষামদ করতে থাকে। আর দুজন আলফা হলে তাদের মধ্যে চলতে থাকে জিঘাংসার যুদ্ধ। সকল নারীদের তার কাছে মনে হয় অসহায় এবং সে তাদের রক্ষাকর্তা। মনে মনে সে সকলকেই তার হেরেমভুক্ত মনে করে। অন্য পুরুষ তাদের প্রতি আগ্রহ দেখালে সে মনে মনে চটে যায়। নারীদের পৃথক কোন সত্ত্বা সে পছন্দ করে না। সে অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হলে তাকে শাস্তি দিতে চায়। পরিবার থেকে, পাড়া, কর্মস্থল, সংগঠন সব ক্ষেত্রে পুরুষের আচরণের পিছনে এই এনিমেল ইনস্টিংক্ট কাজ করে। 

নারীদের মধ্যেও আলফা নারী হওয়ার প্রবনতা কাজ করে। তার টেরিটরির মধ্যে সে সকল নারীদের অধীনস্ত রাখতে চায়। সকল পুরুষকে রাখতে চায় অনুরাগী। এর ব্যত্যয় ঘটলে সে তোষামোদির আচরণ করে, ভিতরে থাকে জিঘাংসা। পুরুষেরা তাকে অসহায় মনে করলেও তারা পুরুষদের মোটেও ভয় পায় না এবং নিজেকে অসহায় মনে করে না! শারীরিকভাবে পুরুষেরা শক্তিশালী এটা তারা জানে এবং পছন্দ করে। সে জানে তার প্রতি পুরুষের আচরণ পুরুষের প্রতি পুরুষের আচরণ থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন। এবং যে কোন শক্তিশালী পুরুষকে পোষ মানানোর ক্ষমতা তার আছে। পুরুষেরা যেমন সকল নারীকে তার হেরেমভুক্ত মনে করে, নারীরা সেভাবে পুরুষদের দেখেনা। তার কাছে সুরক্ষিত স্থানে সন্তান পালনের ব্যপারটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রেমিক হিসেবে সকলকে দেখলেও আলফা পুরুষ হিসেবে সংসার রক্ষা করতে পারবে এমন পুরুষ সে পছন্দ করে। এ সব কিছুই এনিমেল ইনস্টিংক্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। 

এই সমস্ত আচরণ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রতিবেশ পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে সে বিবর্তিত হয়ে উন্নত হয়েছে। কিন্তু গোল বেঁধেছে সে যখন সাধারণ জন্তু থেকে নিজেকে মানুষ হিসেবে পৃথকভাবে চিহ্নিত করেছে, এবং সামাজিক ভাবে পুরুষ ও নারীর ভিন্ন সংজ্ঞা তৈরি করেছে। সে আর এক উপাখ্যান!